Archive

Category Archives for "Uncategorized"

গান্ধারীকে চিঠি – প্রদীপ বালা

শ্রীচরণেষু,
আমাকে আপনি চিনবেন না । হয়তো বা চিনবেন ।
আপনার অনেক পরে আমার জন্ম । তবু
আরও দশজনের মতো আমিও আপনার কথা জানি
জানি আপনার দুঃসাহসিক পতিব্রতা স্ত্রী হয়ে ওঠার কথা
আপনার গুণধর ছেলেদের কথা… আরও যা যা
জানা প্রয়োজন মোটামুটি সবই জানি

 

একসময় আপনার কথা পড়তে পড়তে অভিভূত হয়ে গেছি
সে অনেককাল আগেকার কথা তারপর
ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে
অনেক ঝড় বয়ে গেছে আমার শরীর বেয়েও

 

আর আজ যে শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আছি
এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মেয়েদের
দুরবস্থার জন্য আপনাকেই দায়ী করতে ইচ্ছে করছে

 

সেদিন আপনার অন্ধ স্বামী দেখে নিজেও
চোখে কাপড় বেঁধে অন্ধ সেজে বসলেন
খুবই মহত্ততার পরিচয় দিয়েছেন আপনি
কিন্তু যে ভুলটা করেছেন তার মাশুল যে
সমস্ত ভাবীকাল জুড়ে আমাকে বইতে হচ্ছে
তার জবাব কে দেবে ?

 

আপনার একশো সন্তান । একটাকেও
মানুষ তৈরি করেননি, তাঁদের কোন অন্যায়ের
প্রতিবাদ করেননি মা হয়ে । দ্যুত সভায়
সর্বসমক্ষে দ্রৌপদীর বিবস্ত্রা হবার কথা
শুনেও কিছু বলেননি । আপনার স্বামী
অন্যায়ের পথে চলেছে জেনেও তাঁকে সেই পথ থেকে
নিরস্ত করেননি—
কীসের মহীয়সী আপনি ?
একজন নারী হয়েও নারীর সন্মান রক্ষা করলেন না
আমি বলব সে সন্মানহানি আপনারও হয়েছে !

আজ আপনার সেই ছেলেরা
সেই একশো ছেলে এখন
একশো কোটি ছাড়িয়ে গেছে
যেখানে সেখানে তাঁরা বোমাবাজি করছে
গুলি ছুঁড়ছে (আপনাদের সময়ের তীর ধনুকের আধুনিক সংস্করণ)
রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে, দিনে-দুপুরে
রাতের আঁধারে শত শত দ্রৌপদীর বলাৎকার করছে

 

আর এই এতো কিছুর মাঝেও
আজও আপনি চোখে কাপড় বেঁধে থাকবেন ?
আপনি নয় রাজমাতা ছিলেন
বিপদের আঁচড় পাননি কোনদিনও
তাই সব কিছু সইতে পেরেছেন
মহান পতিব্রতা হতে পেরেছেন
কিন্তু আমি ? আমার মেয়েরা ? কতকাল
কতকাল সইতে হবে ?
কতকাল কাপড় বেঁধে থাকবো চোখে
আর অন্ধের অভিনয় করে যাবো ?

 

গান্ধারী দেবী
আপনার নামে আজও মেয়েরা
মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে
আপনার আদর্শ নিয়ে বাঁচতে গিয়ে
পতিব্রতা হতে গিয়ে হাজার হাজার মেয়ে বৌ
বলি হয়ে গেছে যাদের হাতে
তাঁরা আর কেউ নয়
আপনারই নির্লজ্জ সন্তান

 

জানিনা সেই সময় আপনার অনুশোচনা
হত কিনা । রাত্রে কাঁদতেন কিনা ।
চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ত কিনা বেদনায়
জানি না তাও…
কিন্তু আমি কাঁদি
কাঁদতে তো আপনারাই শিখিয়েছেন
শিখিয়েছেন মুখ বুজে সহ্য করতেও
কিন্তু সব সহ্যের সীমা যেদিন ছাড়িয়ে যাবে
সেদিন প্রতিবাদের পথ একটাই খোলা থাকবে
কড়িকাঠ থেকে ঝুলে পড়ার প্রতিবাদ
গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরানোর প্রতিবাদ
গলায় কলসী বেঁধে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিবাদ…
তাও তো আপনারাই শিখিয়ে আসছেন
. যুগ যুগ ধরে…

 

জানি না এ চিঠি আপনার কাছে পৌঁছবে কিনা
নাকি মাঝপথে দুর্যোধন দুঃশাসনের মতো
লোকের হাতে পড়ে বিবস্ত্রা হয়ে যাবে কিনা অথবা
আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে কিনা
জানি না তাও ।

 

তবু লিখলাম কারণ প্রয়োজন পড়ে গেল
সেইসব মেয়েগুলোর কথা ভেবে যারা

আমার মতন আপনাকে আজও বিশ্বাস করে

যাইহোক ভালো থাকবেন ।
চিঠি পেলে অন্তত একবার পড়ে দেখবেন ।

ইতি—
ভারতবর্ষ

সর্বহারা অবিশ্বাসী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী, বেশ সেজেগুজে এসেছে
কিন্তু আমাদের সঙ্গে খেতে বসবে না
আজ তার নীলষষ্ঠী
যৌবন বয়েসে এই নিয়ে কত না চটুল রঙ্গ করতাম
এখন শুধু একটা পাতলা হাসি,
অন্যের বিশ্বাসে নাকি আঘাত দিতে নেই
আর এক বন্ধু, যে প্রথম আমায় ছাত্র রাজনীতিতে টেনেছিল
তার আঙুলে দেখি একটা নতুন পাথর-বসানো আংটি
আমার কুঞ্চিত ভুরু দেখে সে দুর্বল গলায় বলল
শরীরটা ভালো যাচ্ছে না,
তাই শাশুড়ি এটা পরতে বললেন, মুনস্টোন
না বলা যায় না
আমার মনে হল, এ যেন আমারই নিজস্ব পরাজয়!

 

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকের বাড়ি, মাঝে মাঝে যাই তাঁর আলাপচারী শুনতে
এখনও কত কিছু শেখার আছে
আজই প্রথম দেখলাম, তাঁর দরজায় পেছন দিকে,
গণেশের মূর্তি আটকানো
প্রশ্ন করিনি, তিনি নিজেই জানালেন,

দক্ষিণ ভারত থেকে ছেলে এনেছে, কী দারুণ কাজ না?
সুন্দর মূর্তির স্থান শো-কেসের বদলে দরজার ওপরে কেন
বলিনি সে কথা, সেই ফক্কুড়ির বয়েস আর নেই
বয়েস হয়েছে তাই হেরে যাচ্ছি, অনবরত হেরে যাচ্ছি

অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দিতে নেই, অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দিতে নেই
চতুর্দিকে এত বিশ্বাস, দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে কত রকম বিশ্বাস
যে গেরুয়াবাদী ঠিক করেছে, পরধর্মের শিশুর রক্ত
গড়াবে মাটিতে, চাটবে কুকুরে
সেটাও তার দৃঢ় বিশ্বাস
ধর্মের যে ধ্বজাধারী মনে করে, মেয়েরা গান গাইলে গলার নলি
কেটে দেওয়া হবে

টেনিস খেলতে চাইলেও পরতে হবে বোরখা
সেটাও তার দৃঢ় বিশ্বাস
যে পেটে বোমা বেঁধে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে
যে পেশি ফুলিয়ে, দেঁতো হাসি হেসে
পদানত করতে চাইছে গোটা বিশ্বকে
এরা সবাই তো বিশ্বাসীর দল
সবাই বিশ্বাসী, বিশ্বাসী, বিশ্বাসী…

এক একবার ভাঙা গলায় বলতে ইচ্ছে করে
অবিশ্বাসীর দল জাগো
দুনিয়ার সর্বহারা অবিশ্বাসীরা এক হও!

যদি নির্বাসন দাও – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভুমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।

ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
এখনো নদীর বুকে
মোচার খোলায় ঘুরে
লুঠেরা, ফেরারী ।

শহরে বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি
বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর,
বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
বুলেট ও বিস্পোরণ
শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল–
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।

 

কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দীঘির পারে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক ?
আমি কি দেখিনি কোন মন্থর বিকেলে
শিমুল তুলার ওড়াওড়ি ?

মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ্ণ স্বর ?

বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো… ।

সমস্ত পাগল আমি – বিভাস রায় চৌধুরী

এই যে আমি মরতে চাই
মরতে চাই’ বলে
সহ্য করি ময়লা পশু
মায়াবী ম্যানহোলে

 

কখনও আমি শব্দ ভেঙে
মর্ম ছুঁতে যাইনি
চাইনি কিছু পাইনি কিছু
চাইনি, কিছু পাইনি।

 

এই যে আমি স্বপ্নকামী
জ্বরের ঠোঁটে বিষ।
বীর্যপাত, তরল চাঁদ
দেখছি ভাগ্যিস

 

কখনো আমি বমির ঝুঁকে
গলন প্রিয় মেম
রাত জেগেছি, সঙ্গী সাদা
বিদায়ী কনডম।

 

ঘুমাও পাখি, আমার হাতে
চমকপ্রদ পেন।
কাটছি লেখা, হাঁটছি সুখে
সঘন শ্যাম্পেন।

 

সব বুঝেছি, সব মুছেছি
বুঝলি খোকা খুকু!
খিদের দেশে ল্যাজ বেড়েছে।
ছন্দ, মানে কুকুর

 

তাই তার টুঁটি কামড়ে ধরে
হিংস্র হয়ে যাই।
একটা-দুটো ফুল এনেছে।
আমারই বনসাই

 

এই যে আমি বামন, তবু
বাল্য প্রেমে ভরা।
চাঁদ ধরতে পারিনি, তুমি
বকো বসুন্ধরা।

 

প্রভু আমার, প্রিয় আমার
পেছনে প্রিয় পাখি!
সমস্ত পাগল আমি
নগ্ন করে আঁকি………

কখনো আমার মাকে – শামসুর রাহমান

কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।

 

যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর

 

সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।

 

যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, এখন তাদের
গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে !

বাংলাটা ঠিক আসে না! – ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

 

‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

 

বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’ বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

 

বাংলা যেন কেমন-কেমন, খুউব দুর্বল প্যানপ্যানে
শুনলে বেশি গা জ্ব’লে যায়, একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।
কীসের গরব? কীসের আশা?
আর চলে না বাংলা ভাষা
কবে যেন হয় ‘বেঙ্গলি ডে’, ফেব্রুয়ারি মাসে না?
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

 

ইংলিশ বেশ বোমবাস্টিং শব্দে ঠাসা দারুণ ভাষা
বেঙ্গলি ইজ ডিসগাস্টিং, ডিসগাস্টিং সর্বনাশা।
এই ভাষাতে দিবানিশি
হয় শুধু ভাই ‘পি.এন.পি.সি’
এই ভাষা তাই হলেও দিশি, সবাই ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

 

বাংলা ভাষা নিয়েই নাকি এংলা-প্যাংলা সবাই মুগ্ধ
বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধের বড়ই অভাব
কৌটোর দুধ খাওয়াই স্বভাব
ওই দুধে তেজ-তাকত হয় না, বাংলাও তাই হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

 

বিদেশে কী বাংলা চলে? কেউ বোঝে না বাংলা কথা
বাংলা নিয়ে বড়াই করার চেয়েও ভালো নিরবতা।
আজ ইংলিশ বিশ্বভাষা
বাংলা ফিনিশ, নিঃস্ব আশা
বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

 

শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।

ঝুলন – শ্রীজাত – Bengali Kabita

আজ তো কলকাতা মেঘের ডাকঘর
ঝুলনে সাজিয়েছে ট্র্যাফিক জ্যাম…
তোমাকে শুদ্ধেই মানায় বরাবর।
আমার কল্যাণ শুধুই শ্যাম।

 

রাইও ঘুমিয়েছে সুতোর দোলনায়
এমনই অলসতা, অকাজে ভুল…
শহুরে অভিসার জোনাকি সামলায়
সে বুঝি বৃষ্টিতে বাঁধে না চুল?

 

হৃদয় ছোট পাড়া। রিকশা চলে কম।
তুমি কি হাঁটুজলে আসবে আজ?
দেখেছি আলবেলি কিনারে ঝমাঝম
মেঘের ডাক। আর ডাকের সাজ।

 

শ্রাবণে যত চিঠি নৌকো হয়ে যায়
তারা কি ফিরে আসে ঘাটের পার?
দু’জনে ঘুম যায় নিঝুম ঝুলনায়…
ঝুলনে কাউকেই লাগে না আর।

 

অথচ কলকাতা অথৈ বুকজল
কাজল মুছে নেয় মেঘের চোখ…
ও রাই, শ্যামে যাও। কোরো না বৃথা ছল।
আমার কল্যাণ শুদ্ধ হোক।

এক জন্ম – তারাপদ রায়

অনেকদিন দেখা হবে না

তারপর একদিন দেখা হবে।

দুজনেই দুজনকে বলবো,

‘অনেকদিন দেখা হয় নি’।

এইভাবে যাবে দিনের পর দিন

বত্সরের পর বত্সর।


তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে

বা হয়ত জানা যাবে না,

যে তোমার সঙ্গে আমার

অথবা আমার সঙ্গে তোমার

আর দেখা হবে না।

কবিকন্যা – জয় গোস্বামী

শক্তির মেয়ের সঙ্গে প্রেম করব স্বপ্ন ছিল যুবক বয়সে

শ্রোতার আসনে বসে মঞ্চে দেখা শক্তিকে দু’বার।

কন্যাটিকে একবারও নয়।

তবু ইচ্ছে,ইচ্ছে-সার,মন গাছের গোড়ায় ঢাললেই

ফুল ফুটতে দেরির কী আছে!

শক্তিদা বলার মতো সম্পর্ক যখন হল তখনও কবিকে সীমাহীন

দূরের সম্ভ্রমে রাখি।ভালোবাসি আরো সীমাহারা।

কর্মসূত্রে যে-সাক্ষাৎ,তাকে রেখে আসি কর্মস্থলে।

বাড়িতে একবার যাওয়া, জন্মদিন ভিড়ে সরগরম।

শুনেছি কন্যাটি পড়ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দু’বার যাদবপুরে তার আগেই মুখ পুড়িয়েছি

অতএব ওদিকে না… অনত্র সন্ধান করা ভাল…

দেখলাম একবার মাত্র।শেষযাত্রা চলেছে কবির…

ফুল ভরতি লরির ওপরে

ফাল্গুনের হেলে পড়া রোদ সে-দুহিতা

হাত দিয়ে আড়াল করছে বাবার মুখের সামনে থেকে…

সেই দেখা শ্রেষ্ঠ দেখা।শোকার্ত মুখটিও মনে নেই।

মনে আছে হাতখানি।জগতের সকল কবির

কন্যা সে-ই – সকলের আঘাত, বিপদ

আটকায় সে-হাতপাখা-আজ বুকুনেরই মুখে

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজাকে দেখতে পাই-

যখন বুকুন ওড়না দিয়ে

ট্যাক্সির জানলায় আসা রোদ থেকে আমাকে বাঁচায়।

কন্যা দিবসের শুভেচ্ছা

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের জন্য শেয়ার করবো কন্যা দিবসের শুভেচ্ছা। আশাকরছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আর ভালো লাগলে আপনার শেয়ার করুন আপনার কাছের মানুষের সাথে। আমাদের সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ আপনাকে। চলুন শুরু করি।

 

কন্যা দিবসের শুভেচ্ছা

 

কন্যারা ফুলের মতো, তারা বিশ্বকে সৌন্দর্যে ভরিয়ে দেয়।

 

কন্যা সন্তান হলো ঈশ্বরের দান। তারা মাতা পিতাকে যেমন বোঝে তেমন তাঁদের প্রতি যত্নবানও হন। সুখী জীবন কাটাতে কন্যা সন্তানের সান্নিধ্যে থাকা সৌভাগ্যের বিষয়। শুভ কন্যা দিবস।

 

 কন্যা সন্তানরাই পারে বড় হয়ে একদিন বাবা-মায়ের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে। তাই আপনার বাড়ির মেয়েটির সঙ্গেও মন খুলে হাসুন, চোখ খুলে স্বপ্ন দেখুন এবং তাঁকে অফুরন্ত ভালবাসায় ভরে দিন। দেখবেন ভবিষ্যতে কন্যা সন্তানের চাইতে বড় সাপোর্ট আর কিছুই হবে না পৃথিবীতে। হ্যাপি ডটার্স ডে।

 

সাহস, ত্যাগ, সংকল্প, ভালবাসা, দয়া, প্রতিশ্রুতি – প্রতিটি মেয়ের মধ্যেই এই গুণগুলি থাকা স্বাভাবিক। তাই তো তাঁদের ছাড়া এই সমাজ অসম্পূর্ণ।

মায়েদের জীবনে মেয়েরা অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে। একজন মেয়ে তাঁর মায়ের জীবন সম্পর্কে যত জানে, ততই তাঁর মনের জোর বাড়ে, যাঁর সঙ্গে তারা প্রাণ ভরে হাসেন, মন খুলে কাঁদেন। মেয়েরা হল ফুলের মতোন। যার গন্ধে মায়েদের জীবন সুগন্ধে ভরে ওঠে।

 

প্রত্যেকটি মেয়েই তাঁর বাবার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়। তাই তো বাবাদের কাছে তাঁর মেয়েরা হয় অমূল্য সম্পদ।

 

ছোট বড় নানা দুঃখের কথা নিমেষেই মেয়েরা বুঝে যায়। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাতে সারাক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি তাঁদের সব স্বপ্ন, সব ইচ্ছে যেন পূরণ হয়। ডটার্স ডের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।

 

কন্যা হল দেবদূত। তাই যে ঘরে জন্ম নেয় কন্যা সন্তান, সেই পরিবারে অফুরন্ত আনন্দ ও ভালবাসায় ভরে ওঠে।

 

যে বাড়িতে করা হয় কন্যাকে সম্মান, সেই বাড়ি হয় স্বর্গের সমান।

 

যে বাড়িতে করা হয় কন্যাকে সম্মান, সেই বাড়ি হয় স্বর্গের সমান।

 

কন্যাদের হাসতে শেখান। কারণ, তাদের হাসিতেই লুকিয়ে আছে অফুরন্ত আনন্দের চাবিকাঠি। হ্যাপি ডটার্স ডে

 

 

কন্যা হল ফুলের মতো। যে ঘরে আসে সেই পরিবারে সুগন্ধে ভরে ওঠে, জীবনের ক্যানভাস হয় আরও রঙিন।

 

 মেয়েরা যতই বড় হয়ে যাক না কেন, সারা জীবনই তারা তাঁদের বাবা মায়ের কাছে ছোট্ট প্রিন্সেস হয়েই থাকে।