ঝর্ণা ও জলপ্রপাত নিয়ে কিছু জানা-অজানা

অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখতে সবারই মন চায়। তাইতো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পর্যটক দুর্গম পাহাড়ি পথ ডিঙ্গিয়ে ছুটে যান ঝর্নার পানে। ঝর্ণা দেখ সবারই মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে পানি পড়তেছে? এই পানি এলো কই থেকে? কৌতূহলী মন কত কিছুই জানতে চায়।

আমরা জানি বৃষ্টি হলে পানি মাটির নিচে চলে যায়। পাহাড়গুলোর নিচু স্তর শিলা দ্বারা গঠিত। বৃষ্টির পানি পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি বেয়ে নিচে নামতে নামতে শিলা স্তরে গিয়ে আর নিচে নামতে পারে না। কারণ পানি শিলা ভেদ করতে পারে না। তখন পানি শিলা স্তরের ঢাল বেয়ে নিচের দিকে এক সাইডে যাইতে থাকে। এইভাবে নিচের দিকে আসতে আসতে যখন পাহাড়ের একদিকে এসে মাটি পেয়ে যায় তখন পানির প্রবলে স্রোতে মাটি সরে যায়। পাহাড়ে একটা গর্ত তৈরি হয়ে সৃষ্টি হয় ঝর্ণার। এই গর্ত বেয়ে শিলা স্তরের উপরে জমা হওয়া পানি বের হতে থাকে। পানি পরতে পরতে এক সময় সব মাটি সরে গিয়ে শুধু পাথরই টিকে থাকে। তাই দেখবেন সব ঝর্ণার গোঁড়ায় শুধু পাথর। ঝর্ণা যদি পাহাড়ের উপরিভাগে হয় তাইলে বেশি পানি জমে না। তাই বৃষ্টি হওয়ার কয়েক দিনের মাঝেই পানি শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ঝর্ণারই পানি ধারণ ক্ষমতা কম। তাই বর্ষাকালে ঝর্ণা দেখাই উত্তম।

 

ঝর্ণা আর জলপ্রপাত কি এক?

ঝর্ণা আর জলপ্রপাত দেখতে এক রকম মনে হলেও দুইটা ভিন্ন জিনিষ। ঝর্ণা হল পাহাড়ের উপরে বৃষ্টির জমা হওয়া পানি মাটি ফুড়ে বেরিয়ে আসে। আর জলপ্রপাত হলো পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কোন নদী। যা পাহাড়ের শেষ মাথায় এসে ঝর্ণার ন্যায় নিচে পরে। জলপ্রপাতের মুখ অনেক চওড়া হয়। মাধবকুণ্ড এমন জলপ্রপাত ।

 

ঝর্ণা ও জলপ্রপাতের মাঝে পার্থক্য কী?

ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারা যখন কোন খাড়াপ্রান্তে এসে নিচে পতিত হয় তখন তাকে জলপ্রপাত বলে। হয়তো বিশাল একটা নদী অথবা সরু একটা জলপ্রবাহ পাহাড় বেয়ে নামতে নামতে হঠাৎ পাহড়ের খাড়া প্রান্ত থেকে নিচে পতিত হলো, আর তখনই একটি দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। বরফের বিশাল বিশাল খন্ডের উপরিতল গলে সৃষ্ট পানি প্রবাহিত হয়ে বরফ খন্ডের কোন খাড়া প্রান্ত দিয়ে নিচে পতিত হয়েও জলপ্রপাতের জন্ম হতে পারে।
অন্যদিকে, মাটির নিচে জমা হওয়া পানি পাহাড়ের কোন খাড়া অংশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসলে ঝর্ণার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি, বন্যা, নদীর বা বরফ গলা পানি মাটির কথা ভেদ করে ভূপৃষ্ঠের উপরিতল থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে। এই পানিগুলো মাটির নিচের কোন শিলাস্তরে পৌঁছুলে সেগুলো ভেদ করে আর নিচে নামতে পারে না। তখন পানিগুলো শিলাস্তরের উপর জমা হতে হতে একসময় মাটির নীচ দিয়ে শিলাস্তরের ঢালু অংশ বরাবর সরে আসতে থাকে। পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় মাটির নীচে শিলাস্তরের উপর জমে থাকা পানি এভাবে সরতে সরতে কোন খাড়া প্রান্ত পেয়ে গেলে পানিগুলো মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে অপূর্ব ঝর্ণার সৃষ্টি করে।
বড় আর বিশাল বিশাল নদী পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে নামতে গিয়ে অনেক জলপ্রপাত তৈরি করে বলে পৃথিবীতে যেমন বিশাল বিশাল জলপ্রপাত আছে, তেমনি বিশাল বিশাল ঝর্ণা নেই। সে হিসেবে ঝর্ণারা জলপ্রপাতদের মত অত বিস্তৃত, উন্মক্ত, আর প্রবল প্রতাপশালী নয়। আবার, কিছু কিছু জলপ্রপাত অনেক ঝর্ণার চেয়েও ছোট, খাটো আর শান্ত! হয়ত পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে চলা খুব ছোট্ট, খুব শান্ত একটি জলধারা অসংখ্য.পাথরের গা বেয়ে কলকল শব্দ করে অলস ভঙ্গিতে নেমে এসে শান্ত একটি জলপ্রপাত তৈরি করে।

Source- Here

Bangla Quote